মানবতার ঝাণ্ডা উড়িয়ে একদিকে চলছে সভ্যতার জয়গান; অন্যদিকে অসভ্য নানা কাণ্ডকীর্তিও থেমে নেই। এর মধ্যে কিছু কাণ্ড এতটাই ঘৃণ্য, এতটাই ধিক্কৃত, যা সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে ভীষণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে; প্রশ্নবিদ্ধ করে প্রতিটি সচেতন মানুষের বিবেককে। দেশে সম্প্রতি বেড়ে গেছে ধর্ষণ। সবশেষ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে বিবস্ত্র করে যে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে, এর বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ধিক্কার জানানোর ভাষা নেই আমাদের।
‘আব্বা গো আল্লাহর দোহাই ছাড়ি দে’
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে অনৈতিক কাজের অপবাদ দিয়ে এক নারীকে (৩৬) শরীর বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেছে একদল যুবক। নির্যাতনকারীদের কাছে বারবার মিনতি করেও শেষ রক্ষা হয়নি ওই নারীর। রবিবার নির্যাতনের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবিতে গতকাল সোমবার সোচ্চার হয়ে ওঠেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হয়েছে বিক্ষোভ-মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে আগের স্বামী ওই নারীর সঙ্গে দেখা করতে তার ঘরে প্রবেশ করেন। বিষয়টি দেখতে পান স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার। রাত ১০টার দিকে দেলোয়ার তার লোকজন নিয়ে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করেন এবং পর পুরুষের সঙ্গে অনৈতিক কাজ করেছে বলে অভিযোগ এনে তাকে নির্যাতন শুরু করেন।
একপর্যায়ে পিটিয়ে নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, নির্যাতনকারীদের মধ্যে এক যুবক নারীর পরনে থাকা জামাকাপড় টেনেহিঁচড়ে সম্পূর্ণ খুলে ফেলে। এ সময় ওই নারী বিছানার চাদর, তোশক, খাটের ওপর থাকা বিভিন্ন কাপড় দিয়ে নিজের শরীর ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু নির্যাতনকারীদের মধ্যে কয়েকজন চারদিক থেকে কাপড়গুলো টেনে সরিয়ে দেয়।
এক যুবক নারীর মুখে বারবার লাথি মারে। একজন তার মুখ ও বুকের বিভিন্ন স্থানে কামড় দেয়। এক যুবক নারীর গোপনাঙ্গে বারবার হাত দেয় ও আঘাত করে। আরেক যুবক তার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। নির্যাতনকারীদের বারবার বাবা ডেকেও রক্ষা পাননি ওই নারী। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ওই নারী সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় গোঙাচ্ছেন, কাঁদছেন; সেই সঙ্গে বলছেন-
বাবা গো আমাকে ছেড়ে দে। ‘আব্বা গো তোর আল্লাহ’র দোহাই ছাড়ি দে! আশপাশের ২০-২৫ বছরের ছেলেগুলো হায়েনার মতো হাসছে আর বলছে- উল্টা, উল্টা, উল্টা! কারণ বিবস্ত্র ওই নারী নিজেকে বাঁচানোর জন্য উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন- এরে আব্বা গো, তোগো আল্লাহ’র দোহাইরে। ভিডিওটার পুরো সময়টায় ওই নারী গোঙাচ্ছিলেন, কাঁদছিলেন আর বলছিলেন- বাবা গো, ছাড়ি দে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের মধ্যে দুজনকে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১১)। তারা হলেন- এ ঘটনার প্রধান আসামি বাদল ও দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার। এ ছাড়া গ্রেপ্তার অপর দুজন আবদুর রহিম ও রহমত উল্লাহ।
Leave a Reply